
এডভোকেট রোকন রেজা শেখ ;
আজ ৭জু ২০২৫ইং রোজ শনিবার মহান (রব,মালিক,ইলাহ) আল্লাহ তাআলার ইচ্ছায় আমরা ঈদুল আজহা উদযাপন করলাম । বান্দার জীবনের একমাত্র আরাধনা হওয়া উচিত তার মনিবের নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা। পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপনের মাধ্যমে পশু কোরবানি আল্লাহর নৈকট্যে লাভের অন্যতম মাধ্যম,আমরা বাংলাদেশী মুসলিম জনগোষ্ঠী কোরবানির ঈদ বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। কোরবানি শব্দের অর্থ নৈকট্য, ত্যাগ, উৎসর্গ,অর্থাৎ আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যেই এ কোরবানি।
কোরবানির ঈদ উদযাপনের মাধ্যমে বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও নবী হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাইল (আ.)-এর অতুলনীয় আনুগত্য এবং মহান ত্যাগের পুণ্যময় স্মৃতি বহন করে। আল্লাহপাকের সন্তুষ্টির জন্য মুসলিম উম্মাহ প্রতি বছর পশু কোরবানি করে থাকে।
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে নির্দেশ দিচ্ছেন, ‘অতএব আপনি আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন।’ (সুরা কাউসার, আয়াত : ২)। কোরবানি একটি প্রতীকী ব্যাপার মাত্র, এখানে পশু কোরবানির মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জানমাল থেকে শুরু করে সবকিছুই কোরবানি করতে প্রস্তুত। হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তার পুরো পরিবারের নজিরবিহীন কোরবানির ইতিহাস মানুষকে যে ত্যাগের শিক্ষা দেয়, তাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে একজন মুমিন তার সবকিছুই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করতে সদা প্রস্তুত থাকে।
হজরত ইব্রাহিম (আ.) এবং প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.) এবং মা হাজেরার আল্লাহর প্রতি গভীর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশগুলো আল্লাহতায়ালা হজ্বের অংশ হিসেবে গণ্য করেছেন। আল্লাহতায়ালা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-কে স্বপ্নে দেখালেন, তিনি তার ছেলেকে জবেহ করছেন। (সুরা সাফ)।
পিতা ইব্রাহিম তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে গেলে আল্লাহ বললেন, হে ইব্রাহিম, আমি তোমাকে নিজ পুত্রকে আমার পথে উৎসর্গ করতে বলেছি, হত্যা করতে নয়।
সেই থেকেই পশু কোরবানির মাধ্যমে হযরত ইব্রাহিম আলাইহি সাল্লাম এর স্মৃতি বিজড়িত ঈদুল আযহা বা কুরবানীর ঈদ মুসলিম উম্মাহ পালন করে চলছে। ঈদুল আজহা বা পশু কোরবানি উৎসবের মূল উদ্দেশ্য হলো, হৃদয়েও যদি কোনো পশু থাকে, সেই পশুকে হত্যা করতে হবে। সেটাকে জবাই করতে হবে। হাদিসে আছে, পশু জবাই আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি মাধ্যম, তবে তা ওই ব্যক্তির জন্য, যে নিষ্ঠার সঙ্গে কেবল আল্লাহ তাআলার ভালোবাসায়, আল্লাহর ইবাদাতের উদ্দেশ্যে, ইমান সহকারে পশু জবাই করে,
এমন কোরবানিকে আরবিতে ‘নুসক’ বলা হয়েছে, যার আরেকটি অর্থ আনুগত্য।
আসলে আল্লাহ মানুষের অন্তর দেখেন, কে কোন উদ্দেশ্যে কোরবানি করছে, তা তিনি ভালো করেই জানেন।
আসলে মানুষের মধ্যে সব লোভ-লালসা দূর করে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সব পশুত্বকে বিসর্জনের শিক্ষাই হলো কোরবানির শিক্ষা। তাই কোরবানির অন্যতম ধর্মীয় উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষের মধ্যে পশুত্বকে হত্যা করে মনুষ্যত্বকে জাগিয়ে তোলা।
তাইতো কাজী নজরুল বলেছিলেন ‘মনের পশুরে করো জবাই/পশুরাও বাঁচে বাঁচে সবাই।’
এই পশু কোরবানি সম্পূর্ণ রূপক। আল্লাহর পথে ত্যাগই ঈদুল আযহার আসল শিক্ষা।
কোরবানির জন্তুর রক্ত-মাংস কোনো কিছুই আল্লাহর দরবারে পৌঁছায় না। তার কাছে পৌঁছায় শুধু তোমাদের অন্তরের তাকওয়া।’ (সুরা আল-হাজ্ব 🙂
অতএব তাকওয়া তথা খোদাভীতি লাভের উদ্দেশ্যেই এ কোরবানি। আর প্রকৃত কোরবানি হলো নিজ আত্মার কলুষতাকে জবেহ করা, আত্মার আমিত্বকে জবেহ করা।
আমাদের নিজকে নিজে প্রশ্ন করতে হবে আমাদের এ কোরবানি কি তাকওয়ার কোরবানি ?
পবিত্র ঈদুল আযহার তাকওয়ার শিক্ষা গ্রহণ করলে একটি জাতী উৎসবের মধ্যদিয়েই আত্মত্যাগে বলিয়ান হয়ে ইস্পাত কঠিন জাতীয় ঐক্য করতে পারে।
পারস্পরিক সম্প্রীতি,সামাজিক মেলবন্ধন সৃষ্টি হতে পারে।
ঈদুল আজহা মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব, যা কোরবানি ও ত্যাগের মহৎ বার্তা বহন করে। এই উৎসব সারা দেশে উৎসবের আমেজে পালিত হয় এবং মানুষের মধ্যে সহানুভূতি, পারস্পরিক স্নেহ ও ঐক্যের ভাব জাগ্রত করে।
পবিত্র ঈদুল আযহার প্রকৃত বার্তা সমাজ, রাষ্ট্রের সকল শ্রেণীর জনগণকে পৌঁছে দিতে পারলে জাতির ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রতীক হিসেবে কাজ করতে পারে।
ঈদুল আযহা আমাদের শেখায় ত্যাগ, সহমর্মিতা ও শান্তির মূল্য। এই বার্তা যেন দেশের প্রতিটি মানুষ হৃদয়ে ধারণ করে সুন্দর ও উন্নত সমাজ গড়ে তোলে, সেদিকেই আমাদের প্রত্যেকের দৃষ্টি রাখা উচিত।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে ঈদুল আযহার প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ করার তৌফিক দান করুন আমীম। পরিশেষে ইটনা মিটামইম, অষ্টগ্রামের সর্বস্তরের জনগণকে ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা জানিয়ে শেষ করছি – আল্লাহ হাফেজ বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
এডভোকেট রুকন রেজা শেখ
সংসদ সদস্য প্রার্থী (বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত) কিশোরগঞ্জ-৪ ইটনা,মিটামইন,অষ্টগ্রাম